সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
দেশের ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ এ উদ্বেগ প্রকাশ করে। সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের শীর্ষ চার সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
সম্পাদক পরিষদ মনে করে, প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হতে পারে। কিন্তু শুধু একটি পেশার ১১ জন শীর্ষ নেতার ঢালাওভাবে ব্যাংক হিসাব তলব উদ্দেশ্যমূলক, যা অতীতে কখনো কোনো সময় কোনো পেশার ক্ষেত্রেই ঘটেনি। এ ধরনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতা পেশার ওপর চাপ ও হুমকি বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
সম্পাদক পরিষদের পক্ষে বিবৃতিটি দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
যে ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তারা হলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ। বিএনপি–সমর্থিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন। বিএনপি–সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবদুল কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান।
সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করার পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব গণমাধ্যমে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন “জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব এর ঘটনা অস্বাভাবিক, পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক এবং তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের অজুহাত।
তিনি বলেন, নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বা আইনের শাসনের তাড়নায় সাংবাদিক সমাজের বিরুদ্ধে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন, সংবাদমাধ্যমে অঘোষিত সেন্সরশিপ এবং সর্বোপরি নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সরকার সংকুচিত করে দিয়েছে। সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র এক নজিরবিহীন প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ ‘গণমাধ্যমে’র স্বার্থ রক্ষা ও অধিকার আদায়ে সংগ্রামরত সংগঠনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করার এই অপকৌশলকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো সাংবাদিক বা ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিগত দুর্নীতির অবশ্যই তদন্ত হতে পারে কিন্তু যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে পড়েছে, যখন গণমাধ্যম প্রচণ্ড রকমভাবে সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়েছে তখন সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করার পদক্ষেপ কোনক্রমেই ন্যায় সঙ্গত নয়। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের চরম অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের দুরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিহীন সমাজে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে, সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাবোধ গভীর হবে এবং অর্থনৈতিক সংকট সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।